২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যবসায়িক অস্থিরতা এবং বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা—এই তিনটি চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে চুক্তিগত (contractual) সম্পর্ককে নাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের মূলভিত্তি চুক্তি হলেও, বর্তমান বাস্তবতায় আদালতের দ্বারস্থ হওয়া সবসময় কার্যকর সমাধান নয়। বরং পরিস্থিতির আলোকে আমাদের চিন্তা করতে হবে—”চুক্তি ঠিক ছিল তো?” “বিচারযোগ্য প্রমাণ আছে তো?”
চুক্তির ধরন: মৌখিক না লিখিত?
প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে—আপনার চুক্তিটি কী ধরনের?
মৌখিক চুক্তি (Oral Contract):
যদি চুক্তিটি কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে বিরোধ শুরু হওয়ার আগেই সেটিকে লিখিত রূপ দেওয়া জরুরি। প্রমাণ হিসেবে আপনার কাছে থাকা হোয়াটসঅ্যাপ, এসএমএস, ইমেইল, ফেসবুক মেসেজ, ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার—এসব প্রমাণ অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। যেহেতু মৌখিক চুক্তির ক্ষেত্রে আদালতে ‘সাক্ষী’ এবং ‘চলমান আচরণ’ই প্রধান প্রমাণ হয়।
লিখিত চুক্তি (Written Contract):
বাংলাদেশে অনেকেই শুধু ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তি লিখে স্বাক্ষর করেই মনে করেন কাজ শেষ। কিন্তু আসলে, রেজিস্ট্রেশনই (নিবন্ধন) চুক্তিকে আইনি শক্তি প্রদান করে। জমি, ভাড়া, কর্মসংস্থান, পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের মতো চুক্তির ক্ষেত্রে যথাযথ স্ট্যাম্প ভ্যালু এবং রেজিস্ট্রেশন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চুক্তি লঙ্ঘনের (Breach of Contract) ক্ষেত্রে করণীয়
চুক্তির ধরণ বোঝার পরে আপনাকে চিন্তা করতে হবে—”কে চুক্তি ভাঙলো?”, “কীভাবে ভাঙলো?”
সাধারণত তিন ধরনের অভিযোগ দেখা যায়:
✅সময়মতো পণ্য/সেবা না দেওয়া
✅চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করা
✅অর্থ পরিশোধ না করা
এই অবস্থায় প্রথমেই একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক নোটিশ, ইমেইল বা ফোনের মাধ্যমে দ্বিতীয় পক্ষকে জানানো উচিত যে চুক্তি ভাঙা হয়েছে। সম্ভব হলে আলোচনায় বসে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করুন।
অর্থ পরিশোধ না করার (Non-payment) ঘটনা বেশি ঘটে
সরকার বদলের পর অনেক ব্যবসায়ীই অর্থ পরিশোধে পিছিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের অনিশ্চয়তা, নিম্ন আদালতের বিচারকদের পরিবর্তন, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে মামলা-মোকদ্দমা হুমকি দিয়ে বসে থাকা কার্যকর নয়। বরং চেষ্টা করুন—
✅একটি কম্প্রোমাইজ,
✅ক্রেডিট নোট,
✅ভবিষ্যতের জন্য পোস্ট ডেটেড চেক,
✅অথবা ব্যাংক গ্যারান্টি বা সিকিউরিটি বন্ড নেওয়ার।
বাস্তবসম্মত সমাধান
✅সম্ভব হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপেক্ষা করুন
✅বিকল্প উপায়ে দাবির সমাধান করুন—যেমন আলোচনায় বসে নতুন চুক্তি করুন
✅ব্যক্তিগত সম্পদের তথ্য জেনে তা থেকে চাপ প্রয়োগ করুন (উদাহরণ: ভূমি অফিস, RJSC বা আয়কর অফিসে অনুসন্ধান)
✅ভবিষ্যতে ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান কি না, তা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন—চুক্তি বজায় থাকবে না বিচ্ছেদ হবে?
চূড়ান্ত পরামর্শ
চুক্তির প্রকৃতি বুঝে, প্রমাণ সংগ্রহ করে, বিচারের সময় বিবেচনায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট ও বাস্তব সম্মত সমাধানই বর্তমান বাস্তবতায় সবচেয়ে কার্যকর।