Uncategorized

পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন বাংলাদেশে

আপনার উদ্ভাবন যদি সত্যিই নতুন, উপযোগী এবং শিল্পে ব্যবহারযোগ্য হয়, তবে তার আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাংলাদেশে একটি পেটেন্টের মাধ্যমে আপনি আপনার উদ্ভাবনের একক মালিকানা লাভ করতে পারেন এবং অন্য কেউ যেন তা অনুমতি ছাড়া ব্যবহার না করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে পারেন। এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো—বাংলাদেশে পেটেন্ট নিবন্ধনের জন্য কী কী ডকুমেন্ট লাগে, প্রক্রিয়াটি কেমন এবং কোন খাতে পেটেন্ট পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশে পেটেন্ট নিবন্ধনের প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হলো পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (DPDT), যা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। পেটেন্ট আইনের আওতায় একটি পেটেন্ট ২০ বছরের জন্য প্রদান করা হয়। এই সময়ের মধ্যে উদ্ভাবক তার পণ্য এককভাবে তৈরি, বিক্রি, ব্যবহার বা রপ্তানি করার অধিকার পান।

মূল ধাপগুলো:

  1. প্রাথমিক সার্চ – আপনার উদ্ভাবনটি সত্যিই নতুন কি না তা নিশ্চিত করতে পূর্বপ্রকাশিত তথ্য (Prior Art) খুঁজে বের করুন।
  2. আবেদন প্রস্তুত – আবেদনের সাথে একটি পূর্ণাঙ্গ বিবরণ, চিত্র (যদি থাকে), দাবি (Claims), এবং সারাংশ থাকতে হবে।
  3. আবেদন দাখিল – সংশ্লিষ্ট ফি প্রদান করে DPDT-তে আবেদন দাখিল করতে হবে।
  4. পরীক্ষা – প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে আবেদনে কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধনের জন্য জানানো হয়।
  5. প্রকাশনা ও অনুমোদন – নির্দিষ্ট সময় পরে পেটেন্ট গেজেটে প্রকাশ হয়। কেউ আপত্তি না করলে, আবেদনকারীকে পেটেন্ট প্রদান করা হয়।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসমূহ

পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশনের জন্য নিচের ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে:

  • আবেদন ফর্ম (Form-1) – যার মাধ্যমে পেটেন্ট আবেদনের প্রাথমিক তথ্য প্রদান করা হয়
  • পূর্ণ বিবরণ (Complete Specification/Form-2) – উদ্ভাবনের বিস্তারিত বর্ণনা
  • চিত্র বা ডায়াগ্রাম – প্রয়োজনে
  • দাবিসমূহ (Claims) – আপনি কী কী অধিকার চাইছেন তা নির্দিষ্ট করা
  • সারাংশ (Abstract) – উদ্ভাবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
  • পূর্ববর্তী পেটেন্ট বা সংশ্লিষ্ট আবিষ্কারের তথ্য (Prior Art Disclosure)
  • অভিনventor ship ঘোষণা (Form-5)
  • Power of Attorney (যদি পেটেন্ট অ্যাজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করা হয়)
  • প্রযোজ্য ফি

কে পেটেন্ট পেতে পারবেন না?

বাংলাদেশে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় পেটেন্টযোগ্য নয়, যেমন:

  • কৃষি বা উদ্যানচর্চা পদ্ধতি
  • শল্য চিকিৎসা বা চিকিৎসা পদ্ধতি
  • গণিত সূত্র বা সূত্রভিত্তিক আবিষ্কার
  • কম্পিউটার প্রোগ্রাম (Stand-alone)
  • ব্যবসায়িক পদ্ধতি বা মানসিক কার্যাবলী
  • প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান বস্তু বা জীব

পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশনের খরচ

২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য আবেদন ফি শুরু হয় ৳৫,০০০ থেকে এবং বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য তা ৳২০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও, পরবর্তীতে বার্ষিক নবায়ন ফি রয়েছে, যা পঞ্চম বছর থেকে বাড়তে থাকে।

উপসংহার

আপনার উদ্ভাবন যদি সত্যিই নতুন ও শিল্প ব্যবহারযোগ্য হয়, তবে বাংলাদেশে পেটেন্ট নিবন্ধন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং নিরাপদ বিনিয়োগ। এটি আপনাকে আইনি সুরক্ষা তো দেয়ই, পাশাপাশি বাণিজ্যিক মূল্যও বাড়ায়। সঠিকভাবে ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখা এবং অভিজ্ঞ পেটেন্ট অ্যাটর্নির পরামর্শ গ্রহণ করলে পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ ও সফলভাবে শেষ করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *