বাংলাদেশ হলো WTO-এর (World Trade Organization) সদস্য দেশ, আর সে কারণেই আমাদের দেশ TRIPS নামক একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় পড়ে। এই চুক্তি অনুযায়ী, সব সদস্য দেশকে তাদের নিজ নিজ দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি (IP) এর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হয়। ট্রেডমার্ক আইনও তারই একটা অংশ।
ট্রেডমার্ক অ্যাক্ট, ২০০৯ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক সংক্রান্ত যাবতীয় আইন-কানুন পরিচালিত হয়। নিচে আমরা এই আইনের মূল বিষয়গুলো সহজ করে তুলে ধরেছি।
🔍 ট্রেডমার্ক মানে কী? (ধারা ২(৮))
একটা ট্রেডমার্ক বলতে বোঝায়—
- কোনো নাম, শব্দ, চিহ্ন, ছবি, ডিজাইন বা সংখ্যা,
- যা কোনো পণ্য বা সেবার পরিচয় হিসেবে কাজ করে,
- যাতে করে সেই পণ্য বা সেবাকে অন্যের থেকে আলাদা করে চেনা যায়।
এটা হতে পারে—
- রেজিস্টারকৃত ট্রেডমার্ক
- বাণিজ্যে ব্যবহৃত মার্ক
- সার্টিফিকেশন মার্ক
বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক শ্রেণিবিভাগে NICE Classification (9ম সংস্করণ) অনুসরণ করা হয়, যেখানে মোট ৪৫টি ক্লাস রয়েছে (৩৪টি পণ্যের জন্য, ১১টি সেবার জন্য)।
📝 ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের ধাপসমূহ
বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় হয়। নিচে ধাপে ধাপে তা ব্যাখ্যা করছি:
✅ ধাপ ১: আবেদনপত্র দাখিল (ধারা ১৫)
- আবেদন করতে পারেন: যে কেউ নিজেকে মালিক দাবি করেন
- যা যা লাগবে:
- আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা, পণ্যের নাম ও শ্রেণি
- নির্ধারিত ফি: ৩,৫০০ টাকা
- TM-1 ফরম এ আবেদন জমা
- রেজিস্ট্রার অফিসে নির্দিষ্টভাবে জমা দিতে হয়
✅ ধাপ ২: রেজিস্ট্রারের অনুমোদন
রেজিস্ট্রার আবেদনটি:
- সরাসরি গ্রহণ করতে পারেন
- পরিবর্তনসহ গ্রহণ করতে পারেন
- বা গ্রহণ না-ও করতে পারেন (কারণ দেখিয়ে)
✅ ধাপ ৩: বিজ্ঞাপন (ধারা ১৭)
- অনুমোদনের পর ট্রেডমার্কটি সরকারি গেজেটে বা নির্ধারিত মাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়।
- TM-9 ফরম, ফি ১,০০০ টাকা
✅ ধাপ ৪: আপত্তি (ধারা ১৮)
- যদি কেউ মনে করেন এই ট্রেডমার্ক কারো আগের থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে বা বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে, তাহলে তারা আপত্তি করতে পারেন।
- সময়সীমা: বিজ্ঞাপন প্রকাশের ২ মাসের মধ্যে
- TM-5 ফরম, ফি ২,০০০ টাকা
- আবেদনের পক্ষ থেকে উত্তর দিতে হবে TM-6 ফরমে, ফি ১,৫০০ টাকা
- শুনানির আবেদন: TM-7 বা TM-23, ফি ১,০০০ টাকা
- শুনানি এবং নিষ্পত্তি: ১২০ কর্মদিবসের মধ্যে
✅ ধাপ ৫: নিবন্ধন (ধারা ২০)
- যদি কোনো আপত্তি না আসে বা আপত্তি খারিজ হয়, তাহলে ট্রেডমার্কটি রেজিস্টার্ড হয়ে যাবে।
- সনদপত্র পাওয়া যাবে ১৫০ কর্মদিবসের মধ্যে
- প্রথমবারের জন্য বৈধতা: ৭ বছর
- পরে ১০ বছর মেয়াদে নবায়ন করা যায়।
🔁 পুরো প্রক্রিয়ায় সাধারণত সময় লাগে ২ থেকে ৩ বছর।
🛡️ রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে যে আইনগত সুবিধাগুলো পাওয়া যায় (ধারা ২৫)
ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন হলে যা যা সুবিধা মিলবে:
- নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে একক মালিকানা দাবি করা যাবে
- কেউ আপনার নাম বা চিহ্ন নকল করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে
- ট্রেডমার্ক কপি বা বিভ্রান্তি ঘটালে প্রতিরোধের অধিকার থাকবে
👉 রেজিস্ট্রেশন না থাকলেও “Passing Off” মামলা করে সুরক্ষা পাওয়া যায়—এটা হচ্ছে ইংরেজ আমলের প্রচলিত আইন অনুযায়ী।
❌ ট্রেডমার্ক লঙ্ঘন ও ব্যতিক্রম
- ধারা ২৬ অনুযায়ী, অন্য কেউ যদি আপনার রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক হুবহু বা মিল রেখে ব্যবহার করে, সেটি লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।
- ধারা ২৭ কিছু ক্ষেত্রে বৈধ ব্যবহারের অনুমতি দেয় (যেমন: শিক্ষাগত বা বর্ণনার উদ্দেশ্যে)।
🔄 ট্রেডমার্ক হস্তান্তর বা মালিকানা বদল
- ধারা ৩৪: মালিকানা হস্তান্তর সম্ভব, ব্যবসার goodwill সহ বা ছাড়া
- ধারা ৩৫: রেজিস্টার্ড না থাকলে সাধারণত goodwill সহ ট্রান্সফার হয়
- ধারা ৩৮: goodwill ছাড়া হস্তান্তরের নিয়মও নির্ধারিত আছে
⚖️ অপরাধ ও শাস্তির ধারা
ধারা | অপরাধ | সাজা |
---|---|---|
৭৩ | ট্রেডমার্ক নকল | ৬ মাস থেকে ২ বছর কারাদণ্ড, বা ৫০,০০০–২ লাখ টাকা জরিমানা (পুনরাবৃত্তি হলে ১–৩ বছর জেল) |
৭৪ | নকল মার্কযুক্ত পণ্য বিক্রি | সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা |
৭৬ | মিথ্যা রেজিস্ট্রেশন দাবি | ৬ মাস থেকে ১ বছর জেল বা ৫০,০০০–১ লাখ টাকা জরিমানা |
৭৮ | অফিসিয়াল রেকর্ড নকল | একই সাজা |
📢 উপসংহার
ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন আপনার ব্যবসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি ঢাল। এটি শুধু আপনার ব্র্যান্ডকে রক্ষা করে না, বরং আপনাকে আইনি শক্তিও দেয় অন্যের অনৈতিক ব্যবহার ঠেকাতে।
আপনি যদি ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন, আপত্তি মোকাবিলা, বা আইনি পরামর্শ চান—helpink রয়েছে আপনার পাশে। অভিজ্ঞ আইনজীবীদের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করি আপনার ব্যবসার সম্পূর্ণ সুরক্ষা।